রাজধানী ঢাকায় কয়েক দশক ধরেই ঢাকায় অগ্নিকাণ্ড গটে চলেছে। পর্যবেক্ষণ ও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে বার বার প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ক্রমাগত অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবের ফল এসব ঘটনা।
রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। এসব ভবনে অগ্নিসংকেতের ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: তালাক দেওয়ায় সাবেক স্ত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে নিজেও পুড়ে মরল যুবক
আগুনের ঘটনায় গাফিলতির জন্য রাজউকসহ সংশ্লিস্ট সংস্থা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত নজির সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে। বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে বলে নগর পরিকল্পনাবিদদরা মনে করেন।
প্রায় প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটি হয়। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেন বললেই চলে।
নানা অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন এবং রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমোদনের বাইরে ভবন ব্যবহার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে নিমতলী, চূড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, আরমানিটোলা, নিউমার্কেট, মগবাজার বিস্ফোরণ, গুলিস্তান ট্রাজেডিসহ একের পর এক হৃদয় বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে ঢাকার বাসিন্দাদের। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে রাজধানীর বেইলি রোড ট্রাজেডি। নতুন করে মারা গেছেন ৪৬ জন। এসব প্রতিটি ট্রাজেডির পরেই সংশ্লিষ্ট সবারই মুখেই ঝুঁকিমুক্ত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সময়ের সঙ্গে আড়ালে চলে গেছে প্রতিটি ঘটনা।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে আগুনে পুড়েছে ৩টি ঝুটের গোডাউন
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ইউএনবিকে বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় ইমারত অনুমোদন ও তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্হা, ভবন মালিকসহ যারা দায়ী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারলে আগুনের ঘটনা কমবে, না হলে অতীতের মতো ছাড় দিলে একটার পর একটা ঘটনা ঘটবে।’
এসব অগ্নিকাণ্ডের দায় রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ভবন মালিকের পাশাপাশি জেনে শুনে ভাড়া নেওয়া দোকান মালিকদের নিতে হবে বলে জানান তিনি।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মিশ্র ব্যবহার রাজধানীকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও ঢাকার মতো মিশ্র ব্যবহারের উদাহরণ নেই। রাজউক বাইরের দেশের উদাহরণ দিচ্ছে, কিন্তু বাইরে হয়তো আবাসিক জোনে ছোট্ট একটা কফি শপ বা ছোট্ট কোনো দোকান আছে। কিন্তু ঢাকায় রাজউক যেভাবে আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিকে রূপান্তরের বৈধতা দিচ্ছে, এতে রাজধানীকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঢাকার অধিকাংশ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নির্দেশনা পুরোপুরি না মেনে। নেই পর্যাপ্ত পানি ও অগ্নিনির্বাপণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’